রাজনৈতিক বদলের খেলায় দেশের তাবড় নেতাদের হারমানালেন পূর্ব বর্ধমানের রায়নার নড়ুগ্রাম অঞ্চলের বিজেপি কর্মীরা । তাঁরা নিজের দলের নেতাদের বিরুদ্ধে ধোঁকা দেবার অভিযোগ এনে গত বৃহস্পতিবার যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূল শিবিরে। এর পর ৪৮ ঘন্টা কাটতে না কাটতে ফের পাল্টি মেরে গেরুয়া শিবিরেই ফিরলেন নাড়ুগ্রাম অঞ্চলের শতাধীক বিজেপি কর্মী।এই ঘটনা জানাজানি হতেই রাজনীতিকদের নিয়ে ব্যাঙ্গ বিদ্রুপের জোয়ার বইছে সমগ্র রায়না জুড়ে । সবারই একটাই বক্তব্য, রাজনৈতিক রঙ বদলে গিরগিটিকেও টেক্কা দিল নাড়ুগ্রামের বিজেপি কর্মীরা ।
রায়নার হিজলনায় রয়েছে তৃণমূল বিধায়ক নেপাল ঘোড়ুইয়ের কার্যালয়।নাড়ুগ্রাম অঞ্চল বিজেপির বুথ সভাপতি কার্তিক সাঁতরা সহ শতাধীক বিজেপি কর্মী হঠাৎতই গত বৃহস্পতিবার তৃণমূল বিধায়কের অফিসে পৌছেযান। সেখানে সংবাদ মাধ্যমের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁরা তৃণমূল কংগ্রেস দলে যোগদান করেন । বিধায়ক নেপাল ঘোড়ুই তাঁদের হাতে তৃণমূলের দলীয় পতাকা তুলেদিয়ে দলে বরণ করেনেন ।
তৃণমূলের ঝান্ডা কাঁধে তুলে নিয়ে ওইদিন কার্তিক সাঁতরা ও অপর বিজেপি কর্মী তুষার সিং বলেন , “বিজেপি নেতারা আমাদের ধোঁকা দিয়েছে । লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি নেতারা এলাকার ক্লাব সহ নাড়ুগ্রাম অঞ্চলের উন্নয়ন ঘটানোর উদ্যোগ নেবেন বলে তাঁদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই কথা বিশ্বাস করে লোকসভা ভোটের সময়ে তাঁরা বিজেপির ঝান্ডা কাঁধে তুলেনিয়ে ভোট যুদ্ধে সামিল হয়েছিলেন । পরবর্তি সময়ে তাঁরা বুঝতে পারেন নাড়ুগ্রাম অঞ্চলের উন্নয়ন ঘটানোর ব্যাপাবে বিজেপি নেতাদের কোন সদিচ্ছাই নেই । তাই নড়ুগ্রাম অঞ্চলের উন্নয়নের স্বার্থে তাঁরা বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করলেন ।” শতাধীক বিজেপি কর্মীকে ওই দিন তৃণমূলে যোগদান করাতে পেরে বেজায় উৎফুল্ল হয়েছিলেন তৃণমূল বিধায়ক নেপাল ঘোড়ুই ।সেদিন বিধায়ক তাঁর বক্তব্যে বলেছিলেন , ‘বিজেপি নেতারা যে ধোঁকাবাজ তা নাড়ুগ্রাম অঞ্চলের মানুষজন ভালোভাবেই বুঝেগেছেন ।তাই বিজেপির প্রতি তাঁদের মোহভঙ্গ হয়েছে । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী রায়না সহ সারা রাজ্যে বহু উন্নয়ন কাজ এগিয়ে চলেছে। নাড়ুগ্রামের ক্লাব সহ অঞ্চলের উন্নয়নের দাবি জানিয়েছে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদানকারীরা ।বিধায়ক ওই দিন জানিয়েদেন নড়ুগ্রামের উন্নয়ন কাজে যেটুকু খামতি রয়েছে তা পূরণ করার জন্য তিনি সর্বত ভাবে উদ্যোগ নেবেন । ’
এই ঘটনার পর ৪৮ ঘন্টা কাটতে না কাটতে শনিবার ফের চিত্র নাট্যের বদল ঘটেগেল। বিজেপি নেতাদের আহ্বানে শনিবার বিকালে ফের আবার গেরুয়া শিবিরে যোগদিলেন সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া নড়ুগ্রাম অঞ্চলের ওই সকল বিজেপি নেতা ও কর্মীরা। বৃহস্পতিবার তৃণমূল বিধায়ক নেপাল ঘোড়ুইয়ের কার্যালয়ে যাওয়া কার্তিক সাঁতরা সহ শাতধীক জনের হাতে এদিন বিজেপির দলীয় পতাকা তুলেদেন রায়নার বিজেপি পর্যবেক্ষক বিজন মণ্ডল । এদিন আবার কার্তিক সাঁতরা বলেন , নাড়ুগ্রাম অঞ্চলের উন্নয়নের দাবি নিয়ে গ্রামের মানুষজনের সঙ্গে তিনিও নেপাল ঘোড়ুইয়ের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন । সেখানে চাপসৃষ্টি করে তাঁদের তৃণমূলের ঝান্ডা কাঁধে তুলে নিতে বাধ্য করা হয়েছিল। একই শুরে বিজন মণ্ডল বলেন , উন্নয়ন কাজের দাবি জানাতে যাওয়া বিজেপি কার্যকর্তা ও কর্মীদের ভয় দেখিয়ে নেপাল ঘোড়ুই বিজেপি কর্মীদের তৃণমূলের ঝান্ডা কাঁধে তুলে নিতে বাধ্য করেছিলেন । তাঁরা কেউ মনেপ্রাণে তৃণমূলে যায়নি ।এদিন থেকে তাঁরা আবার বিজেপির ঝান্ডা কাঁধে তুলে নিয়ে তৃণমূল বিরোধী লড়াইয়ে নেমে পড়েছে । কারণ তারা সকলেই বুঝে গেছে তৃণমূলই আশল ধোঁকাবাজ । বিজেপি কর্মীদের এই পাল্টি খাওয়া প্রসঙ্গে তৃণমূল বিধায়ক নেপাল ঘোড়ুই বলেন , কাউকেই ভয় দেখিয়ে তৃণমূলে যোগদান করানো হয়নি ।আশলে বঙ্গ বিজেপিতে এখন গিরগিটি রুপিদেরই বাড়বাড়ন্ত ঘটেছে । নাড়ুগ্রামের বিজেপি কর্মীরাও সেই গোত্রেরই ।